ওয়ান মিনিট টিভি ডেক্স :
এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভোলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং পানি অধিকার ফোরাম-এর যৌথ আয়োজনে “নদী, বন, পাহাড় ও কৃষিজমি : পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা” বিষয়ে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার এবং রবিবার (১৩-১৪ ডিসেম্বর) ঢাকার আগারগাঁও পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত মিলনায়তনে দুই দিন ব্যাপী এই সম্মেলন সারাদেশ থেকে আগত নদী, পরিবেশকর্মী, নারী অধিকার কর্মী, আদিবাসী অধিকার কর্মী, এনজিও কর্মী, সাংবাদিক, লেখক ও গবেষকদের পদচারণায় মুখরিত ছিল।
প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর শনিবার ১০টায় শুরুতে ছিল রেজিস্ট্রেশন পর্ব; অতঃপর ১০:৩০টায় উদ্বোধনী পর্ব। এই পর্বে সভাপতিত্ব করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বেলা’র প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়াম। চা বিরতির পর ‘প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি ও কৃষি অধিকার’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের গবেষক ও সাবেক অধ্যাপক মেঘনা গুহঠাকুরতা’র সভাপতিত্বে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। প্যানেল আলোক হিসেবে ছিলেন, ড. মো. রবিউল আলম, প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনসস্টিটিউট; সঞ্জিব দ্রং সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, এমএম খালেকুজ্জামান এ্যাড. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট; সোহরাব হাসান বাংবাদিক ও কবি এবং পাভেল পার্থ, গবেষক এবং পরিচালক বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক)। মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নদী, পরিবেশ এবং এনজিও কর্মীগণ।
দুপুরের খাবার শেষে ০২:৩০টায় দ্বিতীয় অধিবেশ শুরু হয়ে চলে একটানা ৪:৩০টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘পরিবেশগত ন্যায়বিচার, জীববৈচিত্র, বন ও বনবাসীর অধিকার’ শীর্ষক অলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, অরণ্যক ফাউন্ডেশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী। প্যানেল আলোচক ছিলেন, মো. জাহিদুল কবির উপপ্রধান বন সংরক্ষক, বন অধিদপ্তর; মো. খায়রুল আলম সাবেক মুখ্য গবেষণা কর্মকর্তা, বন গবেষণা ইন্সস্টিটিউট,চট্টগ্রাম; এবং ড. শুনীল কুন্ডু, বন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, সিএনআরএস এবং পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) বন্যপ্রাণীকেন্দ্র, বন অধিদপ্তর। অতঃপর চলে মুক্ত আলোচনা।
দ্বিতীয় দিন রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় তৃতীয় অধিবেশন শুরু হয়। ‘জলবায়ু বিপর্যয়ে ভূমি, বন ও পানি সম্পদে প্রান্তিক নারীর নায্য অধিকার’ বিষয়ে আলোচনা সভায় সভাপতি ছিলেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও বেলা’র সদস্য বাহরীন খান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এএলআরডির উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন, ড. সৈয়দ মো. শাইখ ইমতিয়াজ অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক, ডিজাইন থিংকিং ইনোভেশন এন্ড জেন্ডার ল্যাব, উইম্যান ্এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ড. আইনুন নাহার, অধ্যাপক নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; সুরাইয়া বেগম, পরিচালক রিসার্চ ইন্সস্টিটিউট বাংলদেশ। এ পর্বে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নদী, পরিবেশ এবং এনজিও কর্মীগণ।
চতুর্থ অধিবেশন অর্থাৎ শেষ অধিবেশন শুরু হয় দুপুর ১২টায়। চতুর্থ অধিবেশনে ‘পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সুশাসন : নদী, হাওর ও জলাভূমি’ শীর্ষক অলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন, বিশিষ্ট নদী ও পানি গবেষক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এ্যাড. এবং বেলা’র প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন, ড. এম শাহজাহান মন্ডল, অধ্যাপক পানি ও বন্যা ব্যববস্থাপনা ইন্সস্টিটিউট, বাংলদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়; ড. মো. জসীমউদ্দিন, অধ্যাপক মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অতঃপর চলে মুক্ত আলোচনা। আলোচনা শেষে ২টায় এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা’র সমাপনী বক্তব্য ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে দুইদিন ব্যাপী এই জাতীয় সম্মেলনের পরিসমাপ্তী ঘটে।
সম্মেলনে বক্তাগণের আলোচনায় উঠে আসে, দেশের মোট কৃষি জমি নানা কারণে ৩.৭৫% ভাগ নষ্ট হয়েছে, ১৮ হাজার হেক্টর জমির বন হারিয়ে গেছে; যা গভীর উদ্বেগের। আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভূমি ও কৃষি অধিকার নিশ্চিত করতে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও তা অসম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ এবং অন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় সাধন। দেশের কৃষি গবেষণা টিমে একজন প্রান্তিক কৃষককেও রাখার কথা বলেন। খাদ্য নিরাপত্তা, সেফ ফুড এবং পুষ্টি নিরাপত্তা বিষয়টি গুরত্বের সাথে দেখা উচিৎ বলে অনেকেই মত দেন। এছাড়া আলোচকগণ প্রশ্ন তোলেন, আমাদের ধরত্রী এখন কাঁদে, কেন কাঁদে? আমারা উন্নয়নের নামে অতি উন্নয়ন কেন করবো? আমাদের ইউনাইটেড হতে হবে। গুড গভর্নেস নেই, ক্ষমতায় গেলে সব ভুলে যাই। গবেষণার গুরুত্ব নেই, নারীর কথা উঠলেই রিঅ্যকশন চেঞ্জ হয়ে যায়। আমাদের দেশে আইনের সংখ্যা অনেক কিন্তু প্রয়োগ নেই। আবার পরিবেশ আদালতে আইন করেই জাস্টিস সংকুচিত করা হয়েছে। রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তবে জাস্টিজ পাওয়া দুষ্কর; তবে কাজ করে যেতে হবে। স্কুলিং, পাবলিক সচেতননতা বাড়াতে হবে। আমরা কপ সম্মেলনে গিয়ে শুধুমাত্র লস ও ড্যামেজের কথা বলি; কিন্তু এর যে একটি সামিজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষতির দিক আছে; তা আপনি কীভাবে পূরণ করবেন।
এছাড়া মুক্ত আলোচনায় যে বিষয়গুলো উঠে আস— ভূমি, কৃষি ও পরিবেশ সংস্কার নিয়ে স্বাধীন ও স্থায়ী কমিশন দরকার; আলাদা আইন করা দরকার; শুধু আইন করলেই হবে না, আইনের স্থায়ীত্ব দিতে হবে; দেশের নদ-নদী সুরক্ষায় আরো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, দেশের খাস জমি প্রান্তিক কৃষকগণের মঝে সুষ্ঠু বণ্টন করে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায় কিনা; বিশেষ করে পাবনার চলনবিল, গাজনার বিল, ঘুঘুদহ্ বিলের খাস জমি প্রান্তিক পেঁয়াজ চাষীদের দিয়ে পেঁয়াজ উৎপাদেনে ভুমিকা রাখা যায় কিনা; জরুরি প্রয়োজন পেঁয়াজ সংরক্ষাণাগার বেশি করে তৈরি করা দরকার; বিশ্বে ৬% আদিবাসী এরা কৃষিতে ৮০% ভাগ অবদান রাখেন, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা দরকার; ভূমি ট্রাইবুন্যাল করে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা দ্রুত নিরসন করা দরকারসহ অনেক অনেক বিষয়।
0 Comments