Header Ads Widget

Responsive Advertisement

সাঁথিয়ায় সোঁতি জালে বাধাগ্রস্ত পেঁয়াজের আবাদ জমিতে পাকা ধান কাটতে দেরি

 


মনসুর আলম খোকন, সাঁথিয়া প্রতিনিধি :

পাবনার সাঁথিয়ায় সোঁতি জালে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পেঁয়াজের আবাদ। এতে করে মিতে ধান কাটতেও দেরি হচ্ছে। ফলে সেখানে পেঁয়াজসহ অন্য রবিশস্যের আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

জানা যায়, পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাগেশ্বরী নিষ্কাশন খালে বসানো হয়েছে অবৈধ সোতিজালের ঘের। উপজেলায় করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রাম, দত্তপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রধান নিষ্কাশন খালের  জায়গায় বাঁশের ঘের তৈরি করে সোতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ায় উপজেলার অন্তত ১৫ টি বিলের প্রায় ১০ হাজার বিঘা আমনের ক্ষেত জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। এসব জমিতে ধান কাটতে দেরি হচ্ছে। ফলে সেখানে পেঁয়াজসহ অন্য রবিশস্যের আবাদ করতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, কাগেশ্বরী নদীকে ১৯৯২ সালে প্রধান নিষ্কাশন খালে (ডি ২) রূপান্তরিত করা হয়। এই নদীর সঙ্গে সংযোগ রয়েছে উপজেলার অন্তত ১৫ টি বিলের। বর্ষা মৌসুমে এসব বিলসহ উপজেলার নিচু এলাকার পানি ওই খালের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এসব খালে আমন ধান কেটে পেঁয়াজসহ রবিশস্যের আবাদ করা হয়।

কৃষকেরা জানান, প্রতিবছর অক্টোবরের শেষের দিকে জমি থেকে পানি নেমে যায়। কিন্তু এ বছর উপজেলার নন্দনপুর, গৌরীগ্রাম, করমজা, কাশীনাথপুর ও ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের ২৫ টির বেশি গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার বিঘা আমন খেতে এখনো ১ থেকে ৬ ফুট পানি জমে আছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, প্রধান নিষ্কাশন খালের করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রামের দত্তপাড়া খালে বাঁশ, পলিথিন ও চাটাই দিয়ে বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। সেই বেড়ার সঙ্গে সোতি জাল স্থাপন করে অবাধে পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরা হচ্ছে। বেড়ার কারণে পানিনিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

উপজেলার আফড়া গ্রামের কৃষক নেকবার সরদার বলেন, পেঁয়াজ আবাদের সময় পার হয়া যাতেছে। কিন্তু জমিতে পানি থাকায় আমাগরে গ্রামের কেউই তা আবাদ করব্যার পারতেছি না। তা ছাড়া জমির আমন ধান পাকার পরে তাও কাটব্যার পারতেছি না।

এলাকার কৃষকেরা জানান, সোতি জালের ঘের নির্মাণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা স্থানীয় প্রভাবশালী। ফলে ভয়ে তারা ঘেরমালিকদের কিছু বলতে পারছেন না। প্রশাসনের উদ্যোগে ঘেরগুলো উচ্ছেদ করার দাবি জানান তারা।

করমজা ইউনিয়নের বড়গ্রাম দত্তপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, নিষ্কাশন খালের আড়াআড়ি জুড়ে বাঁশ, পলিথিন, চাটাই ও সূক্ষ্ম জালের সাহায্যে বেড়া দিয়ে সোতি জালের ঘের বোনানো হয়েছে। পানিপ্রবাহের জন্য মাত্র কয়েক ফুট জায়গা রাখায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিনিষ্কাশন।

বড়গ্রাম দত্তপাড়া এলাকার করমজা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আ: মালেক ও রেজাউলের নির্দেশে সোঁতি জাল পরিচালনা করছে বক্স মন্ডলের ছেলে রাজু, বয়েজ খাঁর ছেলে আশরাফ আলী, রেজাউল খাঁর ছেলে আবুল খাঁ, আল মাহমুদ মোল্লার ছেলে বাশার মোল্লা। তারা বলেন, বর্ষা শেষে বিলের পানি বের হওয়ার সময় এই এলাকায় বছরের পর বছর ধরে সোতি জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। সেই হিসাবে অন্যদের মতো তিনিও সোতি জাল বসিয়েছেন। আর সোতি জালের কারণে বিলের পানি বের হতে সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সামসুল রহমান জানান, আমরা এই সোতি জালের কথা শুনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করি। জাল কেটে দিয়ে আসি এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করি। তারা জানায়, তিন দিনের মধ্যে সকল বাঁশ অপসারণ করে নেবে। তারা যদি সেটা না করে তাহলে আমরা আবার ব্যবস্থা নিবো।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, এই সোঁতি জালের কারণে পানি নামতে সময় লাগবে যার প্রভাব কৃষকদের ফসলের উপর পরবে। তাই এই সোঁতি অতি জরুরিভিত্তিতে অপসারণ করা দারকার।

সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিজু তামান্না বলেন, গত দিনে এসি ল্যান্ডকে পাঠানো হয়েছিল, তারা সময় চেয়েছে। অতিদ্রুত তারা নিজেরা অপসারণ না করলে মৎস্য অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রশাসন একসাথে অভিযান করে উচ্ছেদ করা হবে।


Post a Comment

0 Comments

বৈশিষ্ট্যযুক্ত খবর

বগুড়ায় টিএমএসএসের উদ্যোগে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ