ওয়ান মিনিট টিভি ডেস্ক :
১৫ নভেম্বর থেকে আবার শুরু হতে যাচ্ছে পাবনা ইছামতি নদীর খনন কাজ। দীর্ঘদিন নদী খনন কাজ বন্ধ থাকায় জনমনে যেমন হতাশা বিরাজ করছে; অপরদিকে নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনকারীরা ইছামতি নদী উদ্ধারে ব্যাপক আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। ইছামতি নদী উদ্ধার আন্দোলন পাবনার সভাপতি এসএম মাহাবুব আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বৃষ্টি-বর্ষা মৌসুমের অজুহাতে কাজ বন্ধ রেখেছিল প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে বর্ষা মৌসুম কি শীত কালেও হয়? বর্ষা গড়িয়ে শরৎ, হেমন্ত শেষে শীতকাল এসে গেলেও তাদের চৈতন্য ফিরছে না। কীভাবে চৈতন্য ফিরাতে হয় তা আমাদের ভালো করে জানা আছে। নভেম্বরের মধ্যে যদি কাজ ধরা না নয় আমরা পাবনাবাসীকে সাথে নিয়ে ব্যাপক এবং বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলবো।’ নদী ও পরিবেশবাদী সংগঠন রিভারাইন পিপল পাবনার সভাপতি লেখক ও নদী গবেষক ড. মনছুর আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে পানি, কাঁদা, বৃষ্টি, খরা এই ধরনের খোরা অজুহাতে ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ প্রকল্পের মতে মেগা প্রকল্প বন্ধ রাখা সত্যিই হাস্যকর। বৃষ্টির অজুহাতে খনন কাজ না হয় দু’এক মাস বন্ধ রাখলেন; কিন্তু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ তো করা যেতে পারতো। আমরা জানি, এই মেগা প্রকল্পের কাজকে ৬টি স্লটে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য স্লটের কাজগুলোর তো দৃশ্যমান কিছু দেখছি না।’
সূত্র মতে, পাবনা ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ মেগা প্রকল্পের মধ্যে নদী খনন কাজ রয়েছে ১১০কিলোমিটার। এর মধ্যে শহরের ৫ কিলোমিটার খনন ও উচ্ছেদ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক জটিলতা। নিম্ন আদালতে রয়েছে ১০৯টি মামলা এবং সাথে যুক্ত হয়েছে আদলতের নিষেধাজ্ঞা। এদিকে পাবনা শহরবাসী বলাবলি করছেন এবং প্রশ্ন তুলছেন, শহরের ৫ কিলোমিটার নদী উদ্ধার না হলে ইছামতি নদী খনন করে লাভ কী? এছাড়া নদীর শহরাংশেই রয়েছে মহা কর্মযজ্ঞ। নদীর উভয় তীরে ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, বøক ফেলা, জ্রেনেজ নির্মাণ, ৫৬টি ঘাটলা নির্মাণ এবং ৪২ হাজার ৩১০টি বৃক্ষরোপণ করে শোভাবর্ধনের কাজ সবই রয়েছে শহর কেন্দ্রীক। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা হাজির হই, প্রকল্প পরিচালক (পিডি ওনার) পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুধাংসু কুমার সরকার এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুব আলমের অফিসে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুধাংসু কুমার সরকার প্রতিবেদককে জানান, হতাশার কোনো কারণ নেই। এ মাসের মাঝামাঝি হতে খনন কাজ শুরু হবে। শহরের ৫ কিলোটিার সমন্ধে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে ১০৯টি মামলা চলমান আছে এবং কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা এলাকা বাদ রেখে অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী শহরেও কাজ করা হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহাবুব আলম বলেন, নিম্ন আদালত চলমান ১০৯টি মামলা নিষ্পত্তি বিষয়ে আমরা এ্যাড. আবুল হোসেন জোয়ার্দার এবং এ্যাড. জাকির হোসন অর্থাৎ দুইজন সিনিয়র আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছি। উনারা ইতোমধ্যে ৭২টি মামালার জবাব দিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুতই একটা ফলাফল হাতে পাবো ইনশাঅল্লাহ। এছাড়া ব্রিজ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে আমরা শুরু করে দিয়েছি। নদী খনন কাজ ১৫ নভেম্বরের পর থেকে আটুয়া হাউসপাড়া থেকে অনন্ত হয়ে ভাঁড়ারা পর্যন্ত খুব দ্রুত খনন কাজ শেষ করা হবে। এদিকে ইছামতি নদী খননকৃত মাটি অপসারণ কাজেরও ঠিকাদার নিয়োগ হয়ে গেছে। আশা করা যাচ্ছে তারা খুব দ্রুত উদ্বৃত্ত মাটিগুলো অপসারণ করে নিবেন। এছাড়া চরশিবরামপুর-কেষাখালী-রূপপুর চ্যানেলের কিছু জমি অধিগ্রহণ শেষ হলেই ঐ অংশে খনন কাজ শুরু হবে। সুতিখালী চ্যানেল এই মুহূর্তে পানি ছাড়া কোনো সমস্যা নেই।
সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ মেগা প্রকল্পের মধ্যে ২৩টি ব্রিজ নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ কাজ করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিসিএল বা তানভীর কনস্ট্রাকশন লি. এবং ‘অহেদ কনস্ট্রাকশন লি. কে দেওয়া হয়েছে’। এই দুটি কম্পানি ইতোমধ্যে বোরিং করে প্রায় সকল ব্রিজের সয়েল টেস্ট সম্পন্ন করেছে। চরশিবরামপুর ৫ ভেন্টের রেগুলেটর, ভোমরাকোলের ব্রিজসহ মোট ৫টি ব্রিজের ডিজাইন ও এনওসিও হয়ে গেছে। চরশিবরামপুর মাদরাসার পাশে উন্নত প্রযুক্তির ৫ ভেন্টের স্লুইসগেট নেভিগেশন সুবিধাসহ ব্রিজের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
উল্লেখ্য, পাবনা ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ মেগা প্রকল্পের কাজকে মোট ছয়টি স্লটে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। তত্ত্বাবধান করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। কাজের শেষ সীমা ধরা হয়েছে ৩১ মার্চ ২০২৭ খ্রি. পর্যন্ত। এই মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা; যা সঠিক এবং সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হলে পাবনা একটি আধুনিক, যানজটমুক্ত, পরিবেশসম্মত এবং রুচিশীল শহরে পরিণত হবে।
0 Comments