ওয়ান মিনিট টিভি ডেস্ক :
‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর এবং খানমাহমুদপুর গ্রামের মধ্যে ইছামতি নদীর ওপর ব্রজ নির্মাণ কাজ অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চলছে।
বাস্তবায়ন করছে পাবনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং সার্বক্ষণিক তদারকিতে আছেন উপজেলা প্রকৌশলী সাঁথিয়া, পাবনা। এই প্রকল্পটির কাজের নাম দেওয়া হয়েছে, ধোপাদহ ইউপি-নন্দনপুর বাজার R&H ভায়া খানমাহমুদপুর নদীর বাঁধ সড়কের ২,৩৫০ মিটার চেইনেজে ইছামতি নদীর ওপর ১২৪.২০ মিটার ব্রিজ নির্মাণ কাজ। অর্থাৎ ব্রিজটির দৈর্ঘ্য হবে ১২৪.২০ মিটার; এর মধ্যে ৫০m Arch Girder Span (Center), PSC Girder Span 2x25= 50m এবং RCC Slab Span 2x12= 24m রয়েছে। ব্রিজ নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৯২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৯৮৬ টাকা। নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, ৩ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে এবং কাজের শেষ সীমা ধরা হয়েছে, ১৯ নভেম্বর ২০২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ব্রিজ নির্মাণ কাজে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইসিএল প্রাইভেট লিমিটেড এবং ওসি (জেভি) যশোরকে। তারা জয়েন্ট ভেন্চার হিসেবে কাজটি যথাসময়ে সমাপ্ত করবেন বলে আশ করা যাচ্ছে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে ব্রিজ নির্মাণ কাজে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ লক্ষ্য করা গেছে। ব্রিজ নির্মাণ কাজে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, রড, সিমেন্ট, পাথর, মিক্সার মেশিন, পানি অপসারণে মেশিন, ঢালাই কাজ, মাটি অপসারণে কয়েকটি ভেক্যু, বিশাল বিশাল পাইলিং ভেক্যুসহ নানা কর্মযজ্ঞ চোখে পড়লো। তদারককারী সাথিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম সেখানে উপস্থিত থাকায় প্রতিবেদক ব্রিজটিতে নেভিগেশন সুবিধা থাকছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, এই ব্রিজটি আধুনিক এবং উন্নত প্রযুক্তিগত জ্ঞান মাথায় রেখে জেন এর ডিজাইন করা হয়েছে তেমনি পাশাপাশি লোকজ জ্ঞান বিবেচনায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। ব্রিজের নিচ দিয়ে যাতে অবাধে নৌ চলাচল করতে পারে সেজন্য নেভিগেশন সুধিধা রাখা হয়েছে। এছাড়া ব্রিজের এপাশ-ওপাশ অবাধ চলাচলের জন্য এ্যাপ্রোচ রোডের ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো নেভিগেশন কী? বা এর মাত্রাই বা কত? আমরা জানি, উলম্ব ক্লিয়ারেন্স (Vertical Clearance) হলো ব্রিজের সর্বনিন্ম অংশ এবং নদীর পানির মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য। এছাড়া নদীর গভীরতা, স্রোতের বেগ, বৃষ্টি, বর্ষাকাল এবং নদীর প্রসস্ততাও লক্ষ্য রাখতে হয়। সর্বোপরী নদীতে ব্রিজের নিচে নেভিগেশন মাত্রা নির্ভর করে ব্রিজের নকশা ও ও নদীর প্রকৃতির উপর। বর্ষা মৌসুমে কোনো কোনো সেতেু ৬০ ফিটের অধিক উচ্চতা সম্পন্ন করে তৈরি করা হয়, যাতে বড়ো বড়ো জাহাজ সেতুর নিচ দিয়ে অনায়াসে চলাচল করতে পারে। যেমন- শীতলক্ষ্যা নদীতে নির্মিত ক্যাবল স্টেড ব্রিজ। পাবনা ইছামতি নদীর এই অংশ বর্তমানে পাবনা পল্লী উন্নয়ন ও সেচ প্রকল্পের অধীন একটি প্রধান সেচ খাল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও আমাদের গবেষণায় ইছামতি নদীর প্রকৃতি মৌসুমি প্রকৃতির। নন্দনপুর ইছামতির ওপর নির্মিত ব্রিজটির নকশা যাচাই করে দেখা গেছে নদীর প্রকৃতি অনুয়ায়ী ব্রিজের নকশা করা হয়েছে। স্ট্যান্ডর্ড হাই ওয়াটার লেভেল (SHWL) ধরা হয়েছে ১১.২০ মিটার এবং উলম্ব ক্লিয়ারেন্স (Vertical Clearance) রাখা হয়েছে ৫.৪৯ মিটার; যার নিচ দিয়ে বর্ষা মৌসুমেও বড়ো বড়ো নৌকা অনায়াসে চলাচল করতে পারে।
আমরা মনে করি, ব্রিজটি নির্মিত হলে এলাকাবসীর যেমন উপকৃত হবেন তেমনি ব্যবসায়-বাণিজ্য, সড়ক যোগাযোগ, নৌ যোগাযোগসহ লেখাপড়ার নব দ্বার উন্মোচিত হবে। সহজতর হবে নন্দনপুর এবং ধোপাদহ ইউনিয়নবাসীর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার। নদীর ওপারের গ্রামগুলো বিশেষ করে খানমাহমুদপুরবাসীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন এবং দাবি নদী পারাপারে একটি ব্রিজ চাই, সেটা পূরণ হবে। শত শত বছর ধরে চলে আসা সাঁকো পারাপার থেকে মুক্তি পাবে। এছাড়া যেহেতু নেভিগেশন সুবিধাসহ উন্নত প্রযুক্তির ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে সেহেতু আধুনিক নৌ যেগাযোগ এবং প্রতি বছর নৌকা বাইচ-এর আয়োজন অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর হবে।
0 Comments