ওয়ান মিনিট টিভি ডেস্ক :
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলের খয়রান ব্রিজ(Khayran Bridge) এবং গাজনার বিল ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের ভিড়ে এখন মুখরিত হয়ে উঠছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমহাজির হলেই বর্ষার নতুন পানিতে গাজনার বিল থৈ থৈ করে। এ সময় চারিদিকে সবুজ শ্যামল গ্রাম বেষ্টিত বিশাল বিস্তৃত গাজনার বিল সত্যিই অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে। এ সময় দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসেন গাজনার বিল ভ্রমণে।
গাজনার বিলের মাঝ দিয়ে চলে গেছে উপজেলার চিনাখড়া টু খয়রান প্রধান সড়ক। আর ওই সড়কের মাঝে খয়রান এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ। ব্রিজটি পানি প্রবাহ এবং মানুষ ও যানবাহন তথা নৌকা চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হলেও সময়ের পরিক্রমায় ব্রিজটি বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হলে পাবনা জেলাসহ আশ পাশের জেলাসমূহের দূর-দূরান্তের হাজার হাজার পর্যটক আনন্দ ভ্রমণ করতে ওই বিলে ছুটে আসেন। এসব পর্যটকরা ব্রিজটির ওপরে পিকনিক স্পষ্ট হিসেবে মাইক ও সাউন্ড বক্স বাজিয়ে হৈ চৈ করে। পরে নৌকা নিয়ে গাজনার বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। পর্যটকদের বিল ভ্রমণের জন্য সর্বদা ব্রিজের পাশেই থাকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পীডবোড। ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা বাণিজ্যিকভাবে চালানো ওই সকল নৌকা ও স্পীডবোড ভাড়া করে ইচ্ছামত বিল ঘুরে দেখেন। অনেকে আবার পরিবার পরিজন নিয়ে বিলের স্বচ্ছ পানিতে নেমে সাঁতার কেটে, গোসল দিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন। বিলপাড়ের মানুষও বিল ভ্রমণ থেকে পিছিয়ে নেই। তারা বিকাল হলেই নিজস্ব নৌকা নিয়ে বিলে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন।
রাতের খয়রান ব্রিজ এবং বিলের সৌন্দর্য হয়ে উঠে স্বপ্নপুরীর মতো। সেজন্য বিকেল হলেই খয়রান ব্রিজ এলাকায় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রাতের জন্য ডিজে নৌবহর, স্পীডবোট, সাইন্ড বক্স ভাড়া পাওয়া যায়। খয়রান ব্রিজ কেন্দ্রিক গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের কুটিরশিল্প, শিশুদের খেলনা সমগ্রী, অস্থায়ী খাবার দোকানের রমরমা ব্যবসা।বর্তমানে পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত খয়রান ব্রিজ এলাকা।
উল্লেখ্য, বিল গণ্ডহস্তী বা গাজনার বিল পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার একটি বৃহৎ বিল। গাজনার বিল ১৬টি ছোটো-বড়ো বিলের সম্বন্বয়ে গঠিত। সুজানগর উপজেলার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় বিলটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সাথেই সম্পৃক্ত। গাজনার বিলের পানির প্রধান উৎস পদ্মা, যমুনা এবং চলন বিল। দৈর্ঘ্য ৩১ বর্গকিলোমিটার এবং গড় গভীরত ১০-২০ ফিট।
১৯৭২ সাল ও তৎপরবর্তীতে পাবনা জেলার ফসল উৎপাদন ও জেলা বন্যামুক্ত করার লক্ষ্যে পদ্মা-যমুনার তীর ঘেঁষে ‘মুজিব বাঁধ’ তৈরি করা হয়। ফলে পাবনা জেলা বন্যামুক্ত হয় ও গাজনার বিলে ফসলের প্রাচুর্যতা দেখা দেয়। জেলার প্রায় অর্ধেক পেঁয়াজ এই বিলেই উৎপাদন হয় এবং স্বাদু পানির মাছ যোগানে এই বিলের ভূমিকা অনন্য। ২০১০ সালে এই বিলের সৌন্দর্য বাড়াতে ৪১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সারাবছর বিলে পানি ধরে রাখতে ছোট ছোট সংযোগ খাল তৈরি করা হয় এবং যোগাযোগ সুবিধা ও ফসলাদী ঘরে তোলার জন্য অনেকগুলো সাবমারসিবল রাস্তা তৈরি করা হয়। এছাড়া খয়রান ব্রিজ ও লোহার ব্রিজ তৈরি করা হয়।
বিলের বুক চিরে চিনাখরা থেকে খয়রান রাস্তা ও খয়রান ব্রিজ নির্মাণের মধ্যদিয়ে পর্যটন শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে।
বিলে আনন্দ ভ্রমণে আসা পর্যটকরা জানান, বিলটি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। তবে এ জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। বিলে বিশেষ করে খয়রান ব্রিজের আশ-পাশে সারা বছর পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করাসহ পরিকল্পিত কিছু পিকনিক স্পট এবং আবাসন সুবিধা গড়ে তোলা।
0 Comments