ড. মো. মনছুর আলম
বাংদেশের রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার পুঠিয়া বড়ো গোবিন্দ মন্দির বিখ্যাত পুঠিয়া রাজবাড়ি বা পাঁচআনি জমিদার বাড়ির চত্বরে অবস্থিত। রাজবাড়ির পেছনের অংশে এই মন্দিরের একমাত্র মূল প্রবেশপথ। মন্দিরের পেছনে মহারানির স্নানঘাট । অন্যপাশে রাজবাড়ি, এবং রাজবাড়ির বিপরীত পাশে বর্তমানে রয়েছে ভূমি অধিদপ্তরের কার্যালয়। মন্দির এলাকার ভেতরেই রয়েছে কাছারি ঘরের কর্মচারিদের জন্য প্রস্তুতকৃত ভবনের ধ্বংসাবশেষ।
বড়ো গোবিন্দ মন্দির বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ইমারত, যা বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক সংরক্ষিত স্থাপনা। বড়ো গোবিন্দ মন্দির একটি পঞ্চরত্ন শৈলীর হিন্দু মন্দির, যা ১৮৯৫ সালে নির্মিত হয়েছিল। মহারানী হেমন্ত কুমারী দেবী তার শাশুড়ি মহারানি শরৎসুন্দরী দেবীর স্মরণে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। মন্দিরটি মূলত রাধা-গোবিন্দের উপাসনার জন্য ব্যবহৃত হতো।
স্থাপত্যিক বর্ণনা :
পঞ্চরত্ন শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরের পাঁচটি চূড়া বা শিখর (স্পায়ার) রয়েছে। মন্দিরটি মূলত ইট, সুড়কি, পোড়ামাটি দ্বারা নির্মিত, বহিঃদেওয়ালে রয়েছে পোড়ামাটির চিত্রফলক। এসব চিত্রফলকে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতল এই ভবনের তলার আয়তন ২০৯.৩৮০৯ বর্গ মিটার। বর্গাকার এ মন্দিরের প্রতি বাহু ১৪.৪৭মিটার এবং উচ্চতায় প্রায় ১৮.২৮ মিটার। পঞ্চরত্ন স্থাপত্য পরিকল্পনায় এ মন্দিরের চারকোণে চারটি ও কেন্দ্রে একটি করে মোট পাঁচটি শিখর বা রত্ন আছে। শিখরগুলো ক্ষুদ্রাকার, চৌচালা আকারে নির্মিত। প্রথম তলার প্রতি পাশে ৩টি করে প্রবেশ পথ রয়েছে, প্রতিটি প্রবেশপথের উপরাংশে রয়েছে বহুমুখী খিলান। মন্দিরের ছাদের কোণগুলো আংশিক বাঁকানো। এর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য অনেক।
পুঠিয়া রাজবাড়ি রাজশাহী শহর থেকে সড়কপথে এর দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার, আর নাটোর থেকে ১৮ কিলোমিটার। রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দক্ষিণেই এর অবস্থান। রাজশাহী অথবা নাটোরগামী যেকোনো বাসে উঠে পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমে সহজেই হেঁটে বা রিকশায় এখানে চলে আসতে পারবেন।
0 Comments