জুবায়ের খান প্রিন্স :
“এক মুহূর্তেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল”—অগ্নিকাণ্ডে দোকান হারানো ব্যবসায়ীদের এমনই করুণ আক্ষেপ।
১৪ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ, মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে পাবনার আমিনপুর থানার ক্রিসেন্ট হসপিটালের সামনে ফুলবাগান মোড়ে হঠাৎ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই আগুনে ভস্মীভূত হয় ৪০ বাই ২০ ফুট আকারের দুটি দোকান ও ভেতরের সব মালামাল। সৌভাগ্যবশত এ ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
দ্রুত সাড়া দিল ফায়ার সার্ভিস
কাশিনাথপুর ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১১টা ৫ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পাওয়া মাত্রই তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ১১টা ৯ মিনিটে তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রায় এক ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর ১২টা ৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ১২টা ১৫ মিনিটে সম্পূর্ণ নির্বাপণ সম্ভব হয়। উদ্ধার ও নির্বাপণ কাজে নেতৃত্ব দেন কাশিনাথপুর ফায়ার স্টেশনের সাব-অফিসার জনাব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
সম্ভাব্য কারণ: বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট
ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক ধারণা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। বর্তমানে বাজারের অধিকাংশ দোকানেই অপ্রশিক্ষিতভাবে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া হয় এবং পুরোনো তার ব্যবহার করা হয়, যা অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ক্ষয়ক্ষতি কয়েক লাখ টাকার
দোকানের মালিকরা জানান, দোকানজুড়ে বিভিন্ন ধরনের মালামাল মজুদ ছিল। আগুনের তীব্রতায় মুহূর্তেই সবকিছু ছাই হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা
স্থানীয় ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, “হঠাৎ করেই দোকান থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন পুরো দোকানটিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত এসে না পৌঁছালে আশেপাশের আরও দোকান ভস্মীভূত হয়ে যেত।”
অগ্নি-নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব
অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় আবারও সামনে এসেছে গ্রামীণ ও শহরতলীর বাজারগুলোর নিরাপত্তাহীন চিত্র। অধিকাংশ দোকানেই অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র নেই, নেই ন্যূনতম নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরা বিষয়টিকে অবহেলা করায় প্রতি বছরই এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি দোকানে অগ্নি-নির্বাপক যন্ত্র, বৈদ্যুতিক লাইনের নিয়মিত পরিদর্শন এবং জরুরি বহির্গমন পথ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
সতর্কবার্তা ও ভবিষ্যৎ করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অগ্নি-দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে বাজারগুলোতে নিয়মিত মহড়া, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো একসাথে কাজ করলে এই ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
0 Comments