ওয়ান মিনিট টিভি ডেস্ক :
বর্ষাকাল গড়িয়ে এখন শরৎকাল। তবুও ‘পাবনা ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ মেগা প্রকল্পে’র কাজ শুরু হচ্ছে না। দুই মাস আগে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছিলেন, বর্ষা মৌসুমের পরেই খনন কাজ ধরা হবে। এর আগে জুলাই মাসের কয়েকদিন ইছামতি নদীর শহরাংশে ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নকরণ এবং অপসারণ কাজ হলেও তা অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়। আমরা জানি, মধ্য জুন থেকে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত বর্ষাকাল। আগস্ট মাস গড়িয়ে সেপ্টেম্বর মাসও শেষ হতে চললেও খনন কাজের কোনো সাড়া-শব্দ নেই। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে, কার্যত ইছামতি নদী খনন কাজ বন্ধ থাকায় পাবনার আকাশে-বাতাসে বিশেষ করে শহরে ইছামতির এই প্রকল্প নিয়ে নানা প্রশ্ন উড়ে বেড়াচ্ছে। কেউ বলছেন এবারও বোধহয় ভেস্তে গেল প্রকল্প, কেউ বলছেন ইছামতি নদী কোনোদিনও উদ্ধার হবে না, আগেও যা হয়েছে এবারও তাই হবে; ওই যে ভাগ-বাঁটোয়ারা, কেউ আবার ইছামতি নদী ভরাট করে রাস্তা করে দেওয়া হোক এ দাবিও তুলছেন; এতে শহরটা রক্ষা পাবে এবং যানযট মুক্ত হবে। কেউবা আবার চারটি রেকর্ড নিয়ে চাচ্ছেন বৈধ্য ক্ষতিপূরণ। কেউ আবার একধাপ এগিয়ে গিয়ে আন্দোলনকারীদের পাগল বলে করছেন গালিগালাজ।
এমতাবস্থায় অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, হতাশার কোনো কারণ নেই। আগামী আক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে খনন কাজ। প্রকল্প পিডি পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শুধাংসু কুমার সরকার এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, যদি বৃষ্টি বাধা হয়ে না দাঁড়ায় তবে, আশা করা যাচ্ছে আগামী অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে খনন কাজ ধরা হবে। শহরের ৫ কিলোমিটার সমন্ধে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, নিম্ন আদালতে ১০৯টি মামলা আছে, সাথে যুক্ত হয়েছে আদালতের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা এলাকা বাদ রেখে অনুমোদিত ডিজাইন অনুয়ায়ী শহরের কিছু এলাকা খনন কাজ করেছি এবং ডিজাইন অনুযায়ী পরবর্তীতে করা হবে।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্র হতে জানা গেছে, ইছামতি নদীর এই মেগা প্রকল্পের মধ্যে ২৩টি ব্রিজ নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিসিএল বা তানভীর কনস্ট্রাকশন লি. কে ব্রিজ নির্মাণ/পুনঃনির্মাণের কাজ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বোরিং করে ৭/৮টি ব্রিজের সয়েল টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকিগুওলোর কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া ভোমরাকোলের ব্রিজ এবং চরশিবরামপুর ১২ ভেন্টের রেগুলেটরের ডিজাইন হয়ে গিয়েছে। তবে আশা করা যায়, ব্রিজের কাজ খুব শীঘ্রই শুরু হবে। এছাড়া চরশিবরামপুর-কোষাখালী-রূপপুর চ্যানেলের কিছু জমি অধিগ্রহণ শেষ হলেই ঐ অংশে খনন কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সুতিখালী চ্যানেলে পানি ছাড়া এই মুহূর্তে কোনো বাধা নেই।
আমরা জানি, ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ এই মেগা প্রকল্পের কাজকে মোট ছয়টি স্লটে ভাগ করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এমএস আহাদ বিল্ডার্স খনন কাজ করছেন এবং তত্ত্বাবধান করছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। কাজের শেষ সীমা ধরা হয়েছে ৩১ মার্চ ২০২৭ খ্রি. পর্যন্ত। ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ এই মেগা প্রকল্পের মধ্যে নদী খনন কাজ ১১০কিলোমিটার, শহরে নদীর উভয় তীরে ১০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ, রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, ব্লক ফেলা, জ্রেনেজ নির্মাণ, ৫৬টি ঘাটলা নির্মাণ এবং ৪২ হাজার ৩১০টি বৃক্ষরোপণ করে শোভাবর্ধনের কাজ রয়েছে। ইছামতি নদী পুনরুজ্জিবীতকরণ এই মেগা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা; যা বাস্তবায়িত হলে পাবনা একটি আধুনিক যানজটমুক্ত ও পরিবেশসম্মত রুচিশীল শহরে পরিণত হবে।
0 Comments