ওয়ান মিনিট টিভি ডেস্ক :
গাজনার বিল সুপ্রাচীনকাল থেকে পাবনা জেলার একটি অন্যত্যম কৃষি, মৎস্য, ব্যবসায়-বাণিজ্যের অন্যতম উত্তম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হলেও বিনোদন ছিল উপেক্ষিত। বর্তমানে এর সাথে যুক্ত হয়েছে বিনোদন; বিশেষ করে বিলের বুক চিরে চিনাখরা থেকে খয়রান রাস্তা ও খয়রান ব্রিজ নির্মাণের মধ্যদিয়ে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২৫’ খ্রি. শুক্রবার সকাল ৯টার সময় পাবনা শহর থেকে পাবনা টেকনিক্যালস্কুল এন্ড কলেজের বাংলা বিভাগের ইন্সট্রাক্টর আলী আকবর মিয়া রাজুর নেতৃত্বে পাবনার সুজানগর উপজেলার গাজনার বিলে নৌবিহার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবছর নৌবিহারের বাড়তি আকর্ষণ ছিল গাজনার বিলের স্বচ্ছ পানিতে গোসল দেওয়া। নৌকা হতে গহীন বিলে একে একে লাফিয়ে পড়া ছিল মনোমুগ্ধকর।
সকাল ৯টায় পাবনা শহর থেকে মটরবাইক যোগে তারা রওনা দিয়ে সকাল ১০টায় সুজানাগর শহর গিয়ে পৌঁছে। অতঃপর সুজানগর থেকে বন্ধুদের সাথে নিয়ে ১১টায় গাজনার বিলের তীরে গিয়ে পৌঁছেন। খয়রান ব্রিজের পাশে আগে থেকে রিজার্ভ রাখা ইঞ্জিন চালিত নৌকাযোগে তারা রওনা হন। শুক্রবার হওয়ায় তারা শরীর ভিটা জামে মসজিদে জুম্মার সালাত আদায় করেন। পাবনা শহরের বন্ধুদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন দৈনিক ইংরেজি ‘বিজনেস মিরর’ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি নদী গবেষক ড. মো. মনছুর আলম, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের ইন্সট্রাক্টর মীর মোহাম্মদ আবু জাফর, এআর গ্রুপের এইচআর ম্যানেজার মতিউর রহমান, সাংবাদিক ও নদীকর্মী শফিক আল কামাল, হেমরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইমদাদুল হক, চরঘোষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুর রহমান,শাহীন ক্যাডেট স্কুলের সহকারী শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
সুজানগর শহর থেকে যুক্ত হন ঢাকা রোডস এন্ড হাইওয়ের সুপারেন্টেন্ডেন ইঞ্জিনিয়ার আবুল কালাম আজাদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শফিকুর রহমান শফিক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মো. জসিম উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আজমল হেসেন, সুজানগর পৌরসভার অফিসার মোতালেব হোসেন লাল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. আমিরুল ইসলাম, পল্লি চিকিৎসক মো. আব্দুল খালেক, নিশ্চিন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলাম শিমুল, এআর গ্রুপের ডিপিএস ডা. আবুল বাসার মামুন, এআর গ্রুপের আফিসার বখতিয়া হোসেন বকুল, ডেলটা লাইফ ইনসুরেন্স কো.লি. এর ম্যানেজার মো. সিদ্দিকুর রহমান লিটন হোসেন, রানা শেখ মনিরুল ইসলাম এবং শিশু সামিউল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, দিনব্যাপী এই নৌবিহারে মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করেন শ্রীপুর গ্রামের আব্দুস সামাদ প্রামানিক যিনি এআর গ্রুপের এইচআর ম্যানেজার মতিউর রহমানের শ^শুর। অতঃপর তারা শ্রীপুর থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ টায় খয়রান ঘাটে এসে পৌঁছেন।
আমরা জানি, বিল গণ্ডহস্তী বা গাজনার বিল পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার একটি বৃহৎ বিল। গাজনার বিল ১৬টি ছোটো-বড়ো বিলের সম্বন্বয়ে গঠিত। সুজানগর উপজেলার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় বিলটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের সাথেই সম্পৃক্ত। গাজনার বিলের পানির প্রধান উৎস পদ্মা, যমুনা এবং চলন বিল। দৈর্ঘ্য ৩১ বর্গকিলোমিটার এবং গড় গভীরত ১০-২০ ফিট। গাজনার বিলের ইতিহাস ঐতিহ্য যদি বলি, তাহলে দেখা যাবে কোনো বিল সাধারণত তৈরি হয় কয়েকটি নদীর মরা খাত থেকে। গাজনার বিলও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাচীন আত্রাই, পদ্মা, বাদাই, বান্নাই, সেউলী নদীর মরা খাত থেকে এই বিলের উৎপত্তি বলা যেতে পারে। ১৯৭২ সাল ও তৎপরবর্তীতে পাবনা জেলার ফসল উৎপাদন ও জেলা বন্যামুক্ত করার লক্ষ্যে পদ্মা-যমুনার তীর ঘেঁষে ‘মুজিব বাঁধ’ তৈরি করা হয়। ফলে পাবনা জেলা বন্যামুক্ত হয় ও গাজনার বিলে ফসলের প্রাচুর্যতা দেখা দেয়। জেলার প্রায় অর্ধেক পেঁয়াজ এই বিলেই উৎপাদন হয় এবং স্বাদু পানির মাছ যোগানে এই বিলের ভূমিকা অনন্য। ২০১০ সালে এই বিলের সৌন্দর্য বাড়াতে ৪১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় সারাবছর বিলে পানি ধরে রাখতে ছোট ছোট সংযোগ খাল তৈরি করা হয় এবং যোগাযোগ সুবিধা ও ফসলাদী ঘরে তোলার জন্য অনেকগুলো সাবমারসিবল রাস্তা তৈরি করা হয়। এছাড়া খয়রান ব্রিজ ও লোহার ব্রিজ তৈরি করা হয়। ফলে গাজনার বিলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বহু পর্যটনের আগমন ঘটে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিনোদন পিপাসুদের বেশি সমাগম ঘটে। বিকেল হলে খয়রান ব্রিজ এলাকায় উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এ কারণে এই এলাকায় নৌবহর, স্পীডবোট, সাইন্ড বক্স ভাড়া পাওয়া যায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের অস্থায়ী খাবার দোকানের রমরমা ব্যবসাও লক্ষ্য করা গেল।
0 Comments