ওয়ান মিনিট টিভি ডেক্স:
হাওয়াখানা ভবন বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার পুঠিয়ায় অবস্থিত অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই ঐতিহাসিক হাওয়াখানাটি পুঠিয়ার বিখ্যাত চারআনি রাজার ১৭টি পুরকীতির মধ্যে একটি। এটি পুঠিয়া উপজেলা সদরের রাজ প্রাসাদ থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে তারাপুর গ্রামে অবস্থিত। একটি বিশাল পুকুরের মধ্যবর্তী স্থানে এই দ্বিতল ভবনটি দুইশত বছর ধরেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
১০ একর আয়তন এক দিঘির মাঝখানে অবসর বিনোদনের জন্য নির্মিত হয়েছিল চুন সুড়কি আর পাতলা ইটের গাঁথুনি দিয়ে। ভবনটির দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট আর উচ্চতা ৩৪ ফুট। দরজা জানালা বিহিন ভবনটির প্রথম তলা পানির নিচে। দ্বিতীয় তলায় আছে পশ্চিম দেয়ালে ১টি অবশিষ্ট ৩ পাশে ৩ টি করে মোট ১০ টি দরজা। ভবনের চার পাশে আছে ৬ ফুট চওড়া বারান্দা। তৃতীয় তলায় ওঠার জন্য আছে ৩ ফুট চওয়া একটি সিড়িঁ। চুন সুড়কি আর পাতলা ইটের গাঁথুনি দিয়ে তৈরি লাল রঙের দ্বিতল ইমারতের নীচতলা আর্চযুক্ত। এ ইমারতের দোতালায় উঠার জন্য দক্ষিণ পাশে সিড়ি আছে। তৃতীয় তলায় তিন পাশে ৩টি দরজা থাকলেও পশ্চিম দেয়ালে কোন দরজা নেই। ভবনের চার পাশে ৬ ফুট চওড়া বারান্দা আছে।
পুঠিয়া রাজবাড়ীর সদস্যরা রাজবাড়ী থেকে রথ বা হাতীযোগে, পুকুরে নৌকায় চড়ে এসে অবকাশ যাপন এবং পুকুরের খোলা হাওয়া উপভোগ করতেন। জলঘরে খাবার ছিটিয়ে পুঠিয়ার রাজা বাহাদুর দিঘির মাছ দেখতেন বলে জনশ্রুতি আছে। বিকাল বেলা স্নিগ্ধ হাওয়ার পরশ নিতে রাজাবাহাদুর ঘোড়ায় চেপে দিঘির পাড়ে গিয়ে ডিঙি নায়ে চড়ে দিঘির কাজল কালো জলে ভেসে গিয়ে উঠতেন হাওয়াখানা ভবনে। কোন কোন সময় ডিঙ্গি নায়ে দিঘিময়ে ঘুরে বেড়াতেন রাজাবাহাদুর। এক সময় দিঘির চার পাশে বসত রথযাত্রা মেলা। পুঠিয়া রাজবাড়ী থেকে তারা হাওয়াখানা পর্যন্ত কান্দ্রা যে রাস্তা চলে গেছে, সে রাস্তর সাবেক নাম ’’রথগলি’’। পিতল ধাতু দিয়ে তৈরি চারআনি রাজার সে রথটি বর্তমানে নওগাঁ জেলার বদল গাছীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তবে ভবনটির সর্বশেষ ব্যবহারকারী রাজার নাম নরেশ নারায়ন রায়, যিনি কমর বেগম নামে এক মুসলিম মহিলাকে বিয়ে করার সময় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নূরুন্নবি রায় নাম ধারণ করেছিলেন। সেখানে রাজা বাহাদুর স্ববান্ধবে ফূর্তি আমদ, দাবা, তাস, পাশা, খেলতেন। কারো কারো মতে এক, একটি মন্দির, রথযাত্রার সময় ঠাকুর সেখানে গিয়ে পূঁজা করতেন। দেশ বিভাগের সময় রাজা নরেশ নারায়ন রায় ওরফে নূরুন্নবি রায় পুঠিয়া ছেড়ে কলকাতা যাবার কালে গনি মন্ডল ও দেলজান মন্ডল নামে দুই কর্মচারীকে হাওয়াখানা দিঘিটি পত্তন দিয়ে যান। ফলে দিঘির মাঝমাঝি বাঁধ দিয়ে ভাগাভাগির কারণে হাওয়া খানাসহ দিঘির সৌন্দর্য্য হানি হয়েছে। এছাড়া প্রথম তলার স্নানাগার মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে।
হাওয়াখানা ভবনটি নিয়ে একটা পরিকল্পিত পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
0 Comments